বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ই-কমার্সের যে দিকটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা হল অনলাইন কেনাকাটা।অন্য সব ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুকে পেজের মাধ্যমেও চলছে কেনাবেচা।

রাস্তায় যানজট, হুড়াহুড়ি, দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনে শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটার পরিবর্তে এখন অনেকেই তার প্রয়োজনীয় পণ্য অনলাইনে সংগ্রহে সাচ্ছন্দ বোধ করছেন। ফলে স্মার্ট ক্রেতাদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন শপিং।

আর এই অনলাইনে কেনা পণ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যেমে ক্রেতাকে পৌঁছে দেন উদ্যোক্তারা। দিনেদিনে অনলাইনে কেনাকাটা ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ায় পাশাপাশি অল্প সময়ে ক্রেতারা পণ্য হাতে পাওয়ায় কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও জনপ্রিয় হচ্ছে উদ্যোক্তাদের কাছে।

অনলাইনে কেনাবেচার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে পণ্যের ছবি, দাম, অর্ডারের জন্য ফোন নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার কাজ শুধু পণ্য পছন্দ করে অনলাইনে অর্ডার দেয়া। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ফেসবুক পেইজভিত্তিক।

এ ক্ষেত্রে ফেসবুকে পেইজ খুলে উদ্যোক্তা তার পণ্যের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য দিয়ে রাখেন। ক্রেতা নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে অর্ডার দিলে উদ্যোক্তারা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যেমে ক্রেতাকে পণ্যটি পৌঁছে দেন। ফলে অনলাইনে কেনাকাটায় কুরিয়ার সার্ভিসেরও প্রসার ঘটেছে।

এ বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) প্রেসিডেন্ট রাজীব আহমেদ বলেন, এই মুহূর্তে ই-কমার্সে জড়িত এমন এক হাজার ওয়েবসাইট আর আট হাজার ফেসবুক পেজ আছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজারের মতো পণ্য বিক্রি হয়, যা প্রতি মাসে দাঁড়ায় আনুমানিক ৫ থেকে ৬ লাখের মতো। দিন দিন এই সংখ্যা আরো বাড়ছে, এখন ৬৪ জেলা থেকেই অর্ডার আসে। এই অর্ডার আসা পণ্য তারা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যেমে।তাই কুরিয়ার সার্ভিসের ক্ষেত্রটা জমজমাট হওয়ার একটা কারণ ই-কমার্স।

তিনি আরো বলেন, যদি কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি নিয়ে কাজ করা গেলে রাতারাতি মার্কেটে ৫ গুণ ডেলিভারি বেড়ে যাবে। একজন ব্যবসায়ীর যদি পণ্য ডেলিভারির চিন্তা না থাকে তাহলে এ ব্যবসার প্রসার অনেক বাড়বে। যদিও গ্রাম পর্যায়ে ই-কমার্সকে পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে পোস্ট অফিস ব্যবহারের বিষয়ে কথা হয়েছে।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দেয়া অর্ডারের পণ্য ক্রেতাদের ডেলিভারি দিতে বিভিন্ন কুরিয়ারের সেবা নেন ‘এ সেল বিডি’ নামক অনলাইন শপের স্বত্তাধিকারী অতিকুর রহমান।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণত সারাদিনে আসা অর্ডার অনুযায়ি পণ্য প্যাকেট করে কন্ডিশনের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পাঠাই। এ ব্যবস্থায় কুরিয়ারে পাঠানো পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছালে তিনি দাম পরিশোধ করে গ্রহণ করেন। সেক্ষেত্রে কুরিয়ার সার্ভিস মূল্য সংগ্রহ করে উদ্যোক্তার হাতে পৌঁছে দেয় নির্দিষ্ট চার্জের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র আমার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিনে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টি পণ্য কুরিয়ার করি। এমন হাজার হাজার অনলাইন শপ আছে যারা প্রতিদিন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। তবে সব কুরিয়ার সার্ভিসের ‘কন্ডিশন’ পদ্ধতি নেই, থাকলে আমাদের মত উদ্যোক্তাদের সুবিধা হতো।’

এ বিষয়ে একটি প্রতিষ্ঠিত একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শহিদুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ কুরিয়ারের সেবা দেশব্যাপী হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর গ্রাহক কুরিয়ারে তাদের ডকুমেন্ট-মালামাল আদান প্রদান করে থাকেন। এছাড়া অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়টি বর্তমানে জনপ্রিয় হওয়ায় এই ক্ষেত্রের উদ্যোক্তারা ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছাচ্ছেন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যেমে।

জানা গেছে, দেশব্যাপী সেবা দেয়া নামকরা কুরিয়ার সার্ভিস ছাড়াও শুধু ঢাকার মধ্যে ডেলিভারি দেয়ার জন্য অনেক কুরিয়ার সার্ভিস চালু হয়েছে। নিয়ম মেনে স্বল্প সময়ে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পণ্য-ডকুমেন্ট পৌঁছে দিতে একই দিনে ডেলিভারি,পরের দিনে ডেলিভারি, জরুরি ডেলিভারি প্রভৃতি ক্যাটাগরিতে কাজ করছে এসব কুরিয়ার সার্ভিস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *